মানবজাতি কিয়ামতের আগমনের বিষয়টি নিয়ে প্রাচীনকাল থেকেই বিস্মিত ও অনুসন্ধানপরায়ণ। কুরআন ও হাদিসে কিয়ামতের যে দশটি বড় আলামতের উল্লেখ আছে, তার একটি হলো “দাব্বাতুল আরদ”। এটি এমন এক সৃষ্টি, যা কিয়ামতের পূর্বে ভূমি থেকে বের হয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলবে।
কিন্তু এই দাব্বা কে বা কী? কী হবে তার ভূমিকা? ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মে এই ধারণা আছে কি? আধুনিক বিজ্ঞান বা সমাজ কীভাবে ব্যাখ্যা করে এই ঘটনাকে?
চলুন আজকের আর্টিকেলে আমরা এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করি।
দাব্বাতুল আরদ – শব্দের বিশ্লেষণ ও কুরআনিক উল্লেখ
“দাব্বা” শব্দটি এসেছে আরবি ধাতু “دبّ” থেকে, যার অর্থ—পায়ের শব্দ করে ধীরে ধীরে চলা প্রাণী। “আরদ” অর্থ ভূমি বা পৃথিবী।
অর্থাৎ, “দাব্বাতুল আরদ” মানে — ভূমির এক বিশেষ জীব, যা কিয়ামতের পূর্বে বের হবে।
মূল আয়াত:
“আর যখন তাদের ওপর কথা সংঘটিত হবে (অর্থাৎ কিয়ামতের নির্ধারিত সময় আসবে), তখন আমি ভূমি থেকে তাদের জন্য একটি জীব বের করব, যা তাদের সঙ্গে কথা বলবে। কারণ, তারা আমার নিদর্শনে বিশ্বাস করত না।”
(সূরা আন-নামল ২৭:৮২)
এই আয়াত স্পষ্ট করে বলে যে এই জীব কথা বলবে, এবং এটি এমন সময় আসবে যখন অধিকাংশ মানুষ সত্য প্রত্যাখ্যান করবে।
হাদিসে দাব্বাতুল আরদের বর্ণনা
সহীহ মুসলিম, তিরমিযী, এবং অন্যান্য হাদিস গ্রন্থে দাব্বার আগমনকে কিয়ামতের বড় লক্ষণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“কিয়ামতের পূর্বে ১০টি বড় আলামত প্রকাশ পাবে — (এর মধ্যে একটি হলো) দাব্বাতুল আরদ।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস 2901)
কিছু হাদিস বর্ণনায় আসে:
- দাব্বার হাতে থাকবে মূসা (আ.)-এর লাঠি
- এবং থাকবে সুলাইমান (আ.)-এর আংটি
- এর মাধ্যমে সে মানুষের মুখে বা কপালে চিহ্ন দিয়ে দেবে — কে ঈমানদার, কে অবিশ্বাসী
এটি আসবে আকস্মিকভাবে এবং কথা বলবে এমনভাবে, যেন তা মানুষের জ্ঞান, ঈমান ও আত্মশুদ্ধির পরীক্ষা।
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বে দাব্বার ধারণা
ইহুদি ধর্ম:
- “Behemoth” নামের এক ভয়ঙ্কর প্রাণীর কথা আছে হিব্রু বাইবেলে, যা বিচার দিবসে প্রকাশ পাবে।
খ্রিস্টধর্ম:
- Revelation গ্রন্থে বলা আছে — “Beast from the Earth” বিচার দিবসের আগে আসবে।
হিন্দু ধর্ম:
- “কাল্কি অবতার”-এর মাধ্যমে পৃথিবীতে শুদ্ধি আনবে, যদিও এটি মানবরূপী।
বিশ্লেষণ:
সকল ধর্মেই কিয়ামতের আগে এক অলৌকিক শক্তি বা সত্তা আগমনের ধারণা রয়েছে। তবে কুরআন একে জীবন্ত, কথা বলা ও মানুষকে চিহ্নিতকারী এক বাস্তব জীব হিসেবে বর্ণনা করেছে।
বিজ্ঞানের চোখে দাব্বাতুল আরদ
আধুনিক বিজ্ঞান এখনো দাব্বার অস্তিত্বকে স্বীকৃতি দেয় না, তবে কিছু বিশেষজ্ঞ ও চিন্তাবিদ মনে করেন:
- এটি হতে পারে একটি শক্তিশালী রোবট বা AI প্রযুক্তি
- অথবা এক ধরণের জেনেটিকালি ইঞ্জিনিয়ারড প্রাণী
- কারও মতে, এটি প্রাকৃতিক শক্তির প্রতীক (যেমন: ভূমিকম্পের ফাটল থেকে আগত কিছু)
প্যারালাল বিশ্লেষণ:
- দাব্বার “ভূমি থেকে আগমন” শব্দটি মনে করায় সাব-সারফেস ফেনোমেনা, যেমন আগ্নেয়গিরি, ভাইরাস বা ভূকম্প।
তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে এটি কেবল প্রাকৃতিক বা প্রযুক্তিগত নয়, বরং আধ্যাত্মিক ও অলৌকিক বাস্তবতা।
সমাজ ও মানুষের প্রতিক্রিয়া
- আধুনিক সমাজে অনেকে দাব্বাকে মিথ বা প্রতীক ভাবলেও, মুসলিম সমাজে এটি একটি ইমানের বিষয়।
- অনেকে এ নিয়ে জ্ঞানহীন কৌতুক করে, যা ঈমানের জন্য বিপদজনক হতে পারে।
দাব্বা হবে এমন এক চূড়ান্ত সতর্কবার্তা, যেখানে যুক্তি নয়, বরং হৃদয়-নির্ভর বিশ্বাসই হবে পরীক্ষিত।
সত্যের এক জীবন্ত প্রমাণ
দাব্বাতুল আরদ কোনো কল্পকাহিনি নয়। এটি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত, হাদিসে বর্ণিত, এবং ইমানের অংশ।
- এটি একটি অলৌকিক প্রাণী,
- এর আগমন হবে কিয়ামতের পূর্বে,
- এটি মানুষকে চিনিয়ে দেবে, কে বিশ্বাস করে আর কে অস্বীকার করে।
আমরা যারা এখনও আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করি না, তাদের জন্য দাব্বা এক শেষ সুযোগের বার্তা — নিজেকে শুদ্ধ করার, ইমান ফিরিয়ে আনার।
আপনি কি বিশ্বাস করেন দাব্বাতুল আরদ সত্য?
আপনার মতামত নিচে মন্তব্যে জানাতে ভুলবেন না।