ইসলামি এস্ক্যাটোলজির (শেষ যুগের ভবিষ্যদ্বাণী) দুইটি প্রধান ও ভয়াবহ অধ্যায় হলো: ইমাম মাহদি (আ.)-এর আগমন এবং দাজ্জালের ফিতনা। এই দুটি ঘটনাই কিয়ামতের পূর্বে ঘটবে এবং মানবজাতির ঈমান, নেতৃত্ব ও সত্যের জন্য চূড়ান্ত পরীক্ষা হবে।
এই আর্টিকেলে আমরা হাদিস, কোরআন, খ্রিস্ট ও ইহুদি ধর্মগ্রন্থ এবং আধুনিক সমাজের আলোকে এই বিষয় দুটি বিশ্লেষণ করবো।
ইমাম মাহদি কে হবেন?
ইমাম মাহদি হচ্ছেন রাসূল (সা.)-এর বংশধর, যিনি শেষ সময়ে মুসলিম উম্মাহর নেতৃত্বে আসবেন।
“The Mahdi will be from my family, from the descendants of Fatimah.”
(Sunan Abu Dawud, Hadith 4283)“মাহদি আমার পরিবারভুক্ত হবেন, ফাতিমার বংশধরদের একজন।”
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস ৪২৮৩)
“His name will be the same as mine, and his father’s name will be the same as my father’s name.”
(Sunan Abu Dawud, Hadith 4282)“তাঁর নাম আমার নাম হবে এবং তাঁর পিতার নাম আমার পিতার নামের মতো হবে।”
(সুনান আবু দাউদ, হাদিস ৪২৮২)
মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ:
- নাম: মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ
- স্থান: কাবা শরীফে বাইআত নেওয়া
- ভূমিকা: জুলুমে পরিপূর্ণ পৃথিবীকে ইনসাফে ভরিয়ে দেওয়া
দাজ্জাল কে হবে?
দাজ্জাল আরবি “দাজাল” শব্দ থেকে এসেছে, যার অর্থ “প্রতারক” বা “ঢেকে রাখা সত্য”। তিনি হবেন এক ভয়ংকর ফিতনার উৎস, যিনি নিজেকে খোদা দাবি করবেন।
“Dajjal is one-eyed, and between his eyes will be written ‘Kafir’ (disbeliever). Every believer will be able to read it.”
(Sahih Muslim, Hadith 2933)“দাজ্জালের একটি চোখ থাকবে বিকৃত, আর তাঁর কপালে ‘كَافِر’ লেখা থাকবে। প্রত্যেক ঈমানদার তা পড়তে পারবে।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৯৩৩)
তার বৈশিষ্ট্য:
- শারীরিক: ডান চোখ অন্ধ
- দাবি: নিজেকে খোদা দাবি করা
- ক্ষমতা: মানুষকে খাদ্য, বৃষ্টি ও সম্পদ দিয়ে ফাঁকি দেওয়া
- সময়কাল: পৃথিবীতে ৪০ দিন থাকবে — প্রথম দিন হবে এক বছর, দ্বিতীয় দিন এক মাস, তৃতীয় দিন এক সপ্তাহ, তারপর স্বাভাবিক দিন
(Ref: Sahih Muslim, Hadith 2937)
ইমাম মাহদি ও দাজ্জালের সম্পর্ক
- দাজ্জালের আগমনের সময় ইমাম মাহদি মুসলিমদের নেতৃত্ব দেবেন
- দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে
- এরপর ঈসা (আ.) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন
“Jesus, son of Mary, will descend and kill the Dajjal at the gate of Ludd.”
(Sahih Muslim, Hadith 2937)“ঈসা (আ.) অবতরণ করবেন এবং ‘লুদ’ নামক স্থানে দাজ্জালকে হত্যা করবেন।”
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্ব: অন্য ধর্মে এই ধারণা
খ্রিস্টধর্মে (Christianity):
Antichrist:
“The man of sin… who opposeth and exalteth himself above all that is called God.”
(2 Thessalonians 2:3–4)*“পাপের মানুষ… যে ঈশ্বর বলে পরিচিত সব কিছুর উপরে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবে।”
Jesus’ Second Coming:
“This same Jesus… shall so come in like manner as ye have seen him go into heaven.”
(Acts 1:11)*“এই একই যীশু… ঠিক যেভাবে তোমরা তাঁকে আকাশে উঠতে দেখেছ, তেমনভাবেই আবার আসবেন।”
ইহুদি ধর্মে (Judaism):
- দুই ধরনের মশীহের কথা বলা আছে:
- Messiah ben Joseph – যুদ্ধ করবেন এবং মারা যাবেন
- Messiah ben David – মূল রাজারূপে আগমন করবেন
(Ref: Talmud Bavli, Sukkah 52a)
(Midrash Bereshit Rabbah 75:6)
বিশ্লেষণ:
তিনটি ধর্মই বিশ্বাস করে:
- একজন ধোঁকাবাজ নেতা আসবে
- একজন মুক্তিদাতা তাঁকে পরাজিত করবে
- কিয়ামতের পূর্বে চূড়ান্ত সংঘাত ঘটবে
আধুনিক সমাজ ও দাজ্জালের প্রতিচ্ছবি
বর্তমানে আমরা এমন এক যুগে আছি যেখানে:
- মিথ্যা তথ্যের বিস্তার
- প্রযুক্তি নির্ভর বিশ্বাসহীনতা
- ধর্ম থেকে বিচ্যুতি
এগুলো অনেক দিক থেকে দাজ্জালের যুগের প্রস্তুতির মতো।
রাসূল (সা.) বলেন:
“Whoever recites Surah Al-Kahf will be protected from the trial of Dajjal.”
(Sahih Muslim, Hadith 809)“যে সূরা কাহফ পড়বে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।”
আমাদের অবস্থান ও করণীয়
- ইমাম মাহদি আমাদের জন্য আশার প্রতীক — নেতৃত্ব, ন্যায় ও ঐক্যের
- দাজ্জাল সতর্কতার প্রতীক — ঈমানের পরীক্ষা ও প্রতারণার সর্বোচ্চ প্রকাশ
আমাদের উচিত এই দুই ঘটনা নিয়ে শুধু ভয় নয়, আত্মশুদ্ধি ও প্রস্তুতির মনোভাব রাখা।
“ফিতনা আসার আগেই আমল করে নাও”
(তিরমিযী, হাদিস: ২২১৫)