সবুজ পাহাড়ের দেশ এবং বাংলাদেশের বৈচিত্র্যময় পার্বত্য জনপদ
খাগড়াছড়ি জেলা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের একটি শান্তিপূর্ণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত জেলা। এটি পাহাড়, নদী, ঝরনা এবং নৃগোষ্ঠীগত বৈচিত্র্যের জন্য পরিচিত। অপরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, পাহাড়ি জীবনধারা ও স্বতন্ত্র সংস্কৃতির সমন্বয়ে খাগড়াছড়ি বাংলাদেশের পর্যটন এবং স্থানীয় উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র।
গঠনের ইতিহাস ও পটভূমি
-
খাগড়াছড়ির ইতিহাস পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত, যেখানে আদিকাল থেকেই পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বসবাস করে আসছে।
-
ব্রিটিশ আমলে এটি পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল।
-
১৯৮৩ সালে পৃথক জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
-
পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে এখানে শান্তি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে।
প্রশাসনিক তথ্য
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
---|---|
জেলার নাম | খাগড়াছড়ি জেলা |
বিভাগ | চট্টগ্রাম বিভাগ |
জেলা সদর | খাগড়াছড়ি শহর |
উপজেলার সংখ্যা | ৯টি |
পৌরসভার সংখ্যা | ১টি |
ইউনিয়ন পরিষদ | ৩৮টি |
মোট আয়তন | প্রায় ২,৭০০ বর্গকিলোমিটার |
মোট জনসংখ্যা (২০২৫) | আনুমানিক ৭ লক্ষের বেশি |
ধর্মীয় পরিসংখ্যান (আনুমানিক)
ধর্ম | জনসংখ্যার অনুপাত |
---|---|
বৌদ্ধধর্ম | প্রায় ৪০ ভাগ |
খ্রিস্টধর্ম | প্রায় ২৫ ভাগ |
ইসলাম | প্রায় ২০ ভাগ |
হিন্দুধর্ম | প্রায় ১৩ ভাগ |
অন্যান্য | প্রায় ২ ভাগ |
প্রশাসনিক বিভাগসমূহ
খাগড়াছড়ি জেলার ৯টি উপজেলা:
-
খাগড়াছড়ি সদর
-
দীঘিনালা
-
মহালছড়ি
-
মাটিরাঙ্গা
-
গুইমারা
-
লক্ষ্মীছড়ি
-
পানছড়ি
-
মানিকছড়ি
-
রামগড়
স্থানীয় সরকার কাঠামো
-
জেলা প্রশাসক জেলার প্রধান সরকারি কর্মকর্তা
-
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন
-
খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদ স্থানীয় উন্নয়ন ও পরিষেবা কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে
-
ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাগুলো সরাসরি জনগণের সেবা প্রদান করে
নেতৃত্ব ও শাসনব্যবস্থা
-
জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য জেলা পরিষদ যৌথভাবে প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে
-
উপজেলাভিত্তিক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় শাসন ব্যবস্থা পরিচালিত হয়
-
শান্তিচুক্তি অনুযায়ী নৃগোষ্ঠী অধিকার সংরক্ষণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ বিদ্যমান
আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা
-
জেলা পুলিশ বাহিনী ও সেনাবাহিনী সক্রিয়
-
সীমান্তবর্তী এলাকায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা
-
পাহাড়ি এলাকায় স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন তদারকি
অর্থনীতি ও শিল্প
-
প্রধান খাতসমূহ:
-
কৃষি: আদা, হলুদ, লেবু, আনারস, কফি
-
জুম চাষ (পাহাড়ি চাষাবাদ পদ্ধতি)
-
ফল ও সবজি উৎপাদন
-
বাঁশ ও কাঠশিল্প
-
-
উদীয়মান খাত:
-
ইকো-ট্যুরিজম
-
হস্তশিল্প ও গ্রামীণ পণ্য
-
শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠান
-
খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ
-
কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও কারিগরি স্কুল
-
সরকারি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বিস্তৃত
-
শিক্ষার হার (২০২৪): প্রায় ৬৮ ভাগ
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
-
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতাল
-
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিউনিটি ক্লিনিক
-
স্বাস্থ্য সেবা প্রসারে মা ও শিশু স্বাস্থ্য কর্মসূচি চালু
-
দুর্গম এলাকায় স্বাস্থ্যকর্মীদের মোবাইল সেবা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ
যোগাযোগ ও অবকাঠামো
-
সড়ক: খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম মহাসড়ক
-
জেলার অভ্যন্তরে উন্নত গ্রামীণ সড়ক ব্যবস্থা
-
পাহাড়ি অঞ্চলে সেতু নির্মাণ এবং সংযোগ রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্প
-
দূরবর্তী অঞ্চলে পরিবহন সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টা চলছে
পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
-
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:
-
সাজেক ভ্যালি (খাগড়াছড়ির অংশবিশেষ)
-
আলুটিলা গুহা
-
রিসাং ঝরনা
-
ডলু ঝরনা
-
দীঘিনালার বাগানবাড়ি এলাকা
-
-
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থান:
-
খাগড়াছড়ি রাজবাড়ি
-
বিভিন্ন বৌদ্ধ বিহার ও পাহাড়ি মন্দির
-
সংস্কৃতি ও জীবনধারা
-
প্রধান জাতিগোষ্ঠী: চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, বম, খিয়াং
-
নিজস্ব পোশাক, ভাষা ও খাদ্যসংস্কৃতি
-
পাহাড়ি সংগীত, নৃত্য ও লোককাহিনি
-
বিশেষ উৎসব: বিজু, সাংগ্রাই, বৈসু, ফুল উৎসব
সারাংশ
খাগড়াছড়ি জেলা প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও শান্তির এক অপূর্ব মিলনস্থল। পাহাড়ি মানুষের অতিথিপরায়ণতা, সবুজ অরণ্য, পরিষ্কার বাতাস এবং বৈচিত্র্যময় জীবনধারার জন্য এটি বাংলাদেশের অন্যতম আকর্ষণীয় জেলা। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মানবিক সম্প্রীতির ঐতিহ্য ধরে রেখে খাগড়াছড়ি উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে।
নিউজ ও আর্টিকেল
নিচের শিরোনামগুলোতে ক্লিক করে এই অংশ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধসমূহ পড়ুন:
আমাদের লক্ষ্য (ওয়েবসাইট ভিশন)
এই ওয়েবসাইটে আমরা তুলে ধরছি বাংলাদেশের প্রতিটি:
-
বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সংক্রান্ত তথ্য
-
ইতিহাস, জনসংখ্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশ
-
পর্যটন স্থান, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, স্থানীয় উৎসব ও খাদ্যসংস্কৃতি
-
তথ্যনির্ভর, নির্ভরযোগ্য ও আপডেটেড একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় তথ্যভাণ্ডার
যোগাযোগ করুন
আপনার এলাকার তথ্য আপডেট বা সংশোধনের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
আপনার অংশগ্রহণই আমাদের এই তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।
ধন্যবাদ!
আপনি এখন বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্ত জানার যাত্রায় আছেন – আমাদের সাথেই থাকুন!