আকিকা হলো ইসলামিক একটি সুন্নত আমল, যা নবজাতক শিশুর জন্য করা হয়। ইসলামে এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, যা মূলত আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের একটি মাধ্যম। আকিকা করার মাধ্যমে শিশুর জন্য কল্যাণ, সুরক্ষা ও বরকতের দোয়া করা হয়।
আকিকার বিধান ইসলামে
১. আকিকা করা কি বাধ্যতামূলক?
আকিকা করা ওয়াজিব নয়, বরং সুন্নতে মোয়াক্কাদা। এটি করার মাধ্যমে অনেক কল্যাণ লাভ করা যায়, তবে কেউ না করলে গুনাহ হবে না।
২. আকিকার সময়
- সাধারণত শিশু জন্মের সপ্তম দিনে আকিকা করা উত্তম।
- যদি সম্ভব না হয়, তাহলে ১৪তম বা ২১তম দিনেও করা যায়।
- পরবর্তীতেও যে কোনো সময় করা যেতে পারে, তবে যত দ্রুত সম্ভব করা ভালো।
৩. আকিকায় কত পশু জবাই করতে হয়?
- পুত্র সন্তানের জন্য: দুটি ছাগল/ভেড়া বা একটি গরু/উটের অংশ।
- কন্যা সন্তানের জন্য: একটি ছাগল/ভেড়া বা গরু/উটের অংশ।
- তবে সামর্থ্য না থাকলে একটিও দেওয়া যায়।
৪. আকিকার গোশত কীভাবে বিতরণ করা হয়?
- আকিকার গোশত নিজেরা খেতে পারেন, আত্মীয়-স্বজন ও দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করা যায়।
- কুরবানির মতো তিন ভাগ করার প্রয়োজন নেই, তবে গরিবদের দেওয়া উত্তম।
আকিকার উদ্দেশ্য ও গুরুত্ব
১. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ – সুস্থ ও সুন্দর সন্তান দেওয়ার জন্য।
2. শিশুর মঙ্গল কামনা – আকিকার মাধ্যমে শিশুর উপর থেকে অকল্যাণ দূর করা হয়।
3. নাম রাখা ও চুল কাটার সুন্নত – আকিকার দিন নবজাতকের চুল কেটে ওজন পরিমাণ রূপা বা এর সমমূল্যের টাকা দান করা উত্তম।
4. শিশুর জন্য শয়তানের অনিষ্ট থেকে সুরক্ষা – এটি নবজাতকের জন্য বিশেষ দোয়া ও বরকতের আমল।
হাদিস থেকে আকিকার গুরুত্ব
📖 রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“প্রতিটি শিশু তার আকিকার সাথে বন্ধক থাকে। সপ্তম দিনে তার জন্য পশু জবাই করা হবে, তার মাথার চুল কাটা হবে এবং তার নাম রাখা হবে।”
📚 (তিরমিজি: ১৫২২, আবু দাউদ: ২৮৩৮)
📖 হযরত আয়েশা (রা.) বলেন:
“রাসুলুল্লাহ (সা.) পুত্র সন্তানের জন্য দুটি এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল জবাই করতে বলেছেন।”
📚 (আহমদ: ২৫৭৮৪)
অন্যান্য ধর্মে আকিকার ধারণা
- ইসলামে আকিকা একটি ইবাদত এবং সুন্নত।
- খ্রিস্টান ধর্মে সাধারণত ‘বাপ্তিস্ম’ (baptism) করা হয়, যেখানে শিশুকে আশীর্বাদ দেওয়া হয়।
- হিন্দু ধর্মে শিশুর জন্মের পর ‘নামকরণ’ (নাম সংকল্প) ও ‘মুন্ডন’ (চুল ফেলা) করা হয়।
শেষ কথা
আকিকা ইসলামের একটি সুন্দর আমল, যা নবজাতকের জন্য কল্যাণ ও বরকতের মাধ্যম। এটি কোনো বাধ্যতামূলক কাজ নয়, তবে সুন্নত হওয়ায় করা উত্তম। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং শিশুর জন্য দোয়া করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
আপনার সন্তানের আকিকার জন্য দোয়া রইলো!