একটি ডিজিটাল রেডিও সেট যেখানে FM ও AM তরঙ্গ প্রদর্শিত হচ্ছে, আধুনিক প্রযুক্তি ও রেডিও যোগাযোগের প্রতীক

রেডিওর FM/AM কী – আবিষ্কার, বিশ্লেষণ ও বর্তমান ব্যবহার

বেতার তরঙ্গের বৈজ্ঞানিক যাত্রা, ইতিহাস থেকে আজকের ডিজিটাল রেডিওর প্রযুক্তি পর্যন্ত

রেডিও—একটি শব্দ যা এক সময়ের মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল।
আজকের ডিজিটাল যুগে এটি কিছুটা ছায়ায় চলে গেলেও, FM এবং AM রেডিওর ব্যবহার এখনও গুরুত্বপূর্ণ।
এই আর্টিকেলে আমরা জানব:

  • রেডিওর FM ও AM এর পার্থক্য কী

  • কে রেডিও আবিষ্কার করেছিলেন

  • কিভাবে এটি কাজ করে

  • বর্তমানে রেডিও কোথায় এবং কীভাবে ব্যবহৃত হয়


FM এবং AM কী?

AM (Amplitude Modulation):

  • রেডিও সিগন্যালকে তরঙ্গের উচ্চতা (Amplitude) পরিবর্তন করে তথ্য পাঠানো হয়

  • ফ্রিকোয়েন্সি সাধারণত ৫৩০ থেকে ১৭০০ কিলোহার্টজ (kHz)

  • শব্দের গুণমান তুলনামূলক কম, কিন্তু দুরত্বে পৌঁছাতে সক্ষম

  • সাধারণত নিউজ, টক শো, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ইত্যাদিতে বেশি ব্যবহৃত

FM (Frequency Modulation):

  • রেডিও তরঙ্গের ফ্রিকোয়েন্সি (Frequency) পরিবর্তনের মাধ্যমে তথ্য পাঠানো হয়

  • ফ্রিকোয়েন্সি ৮৮ থেকে ১০৮ মেগাহার্টজ (MHz)

  • উচ্চ মানের শব্দ, স্টেরিও সম্প্রচার সম্ভব

  • সাধারণত গান, বিনোদন, মিউজিক শোতে ব্যবহৃত


রেডিওর আবিষ্কার ও ইতিহাস

  • রেডিওর তাত্ত্বিক ভিত্তি তৈরি করেন জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল (James Clerk Maxwell)

  • ১৮৮৫ সালে হাইনরিখ হার্টজ (Heinrich Hertz) প্রথম বেতার তরঙ্গ সৃষ্টি করেন

  • ১৮৯৫ সালে গুগলিয়েলমো মার্কোনি (Guglielmo Marconi) প্রথম সফলভাবে রেডিও সিগন্যাল পাঠাতে সক্ষম হন

  • তিনি ১৯০১ সালে আটলান্টিক মহাসাগরের উপর দিয়ে প্রথম রেডিও বার্তা পাঠান

  • এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে রেডিও সংবাদ, সামরিক যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে ওঠে


রেডিও কীভাবে কাজ করে?

  1. স্টেশন একটি নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে অডিও সিগন্যাল পাঠায়

  2. মডুলেশন দ্বারা সিগন্যালকে পরিবর্তন করা হয় (AM বা FM)

  3. রেডিও রিসিভার সেই তরঙ্গ গ্রহণ করে

  4. ডিমডুলেশন এর মাধ্যমে সেটিকে আবার শব্দে রূপান্তর করা হয়


বর্তমানে রেডিওর ব্যবহার

১. গণমাধ্যম ও সংবাদ:

  • আজও অনেক দূর-দূরান্তের মানুষ, যেখানে ইন্টারনেট নেই, সেখানে AM রেডিও একমাত্র নির্ভরযোগ্য সংবাদমাধ্যম

২. বিনোদন ও গান:

  • FM চ্যানেল আজও শহরাঞ্চলে খুবই জনপ্রিয়

  • Bangladesh Betar, Radio Today, ABC Radio ইত্যাদি এখনো সক্রিয়

৩. গাড়ি ও যানবাহন:

  • প্রায় সব গাড়িতেই এখনো রেডিও বিল্ট-ইন থাকে

  • চলন্ত অবস্থায় খবর, আবহাওয়া, ট্রাফিক আপডেট পাওয়া যায়

৪. দুর্যোগ ও জরুরি বার্তা:

  • ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড়, বন্যার সময় সরকারি সতর্কবার্তা দ্রুত ছড়ানোর জন্য রেডিও ব্যবহার হয়

৫. শিক্ষাবিষয়ক অনুষ্ঠান:

  • দূরশিক্ষা বা গ্রাম পর্যায়ে শিক্ষাদানেও রেডিও ব্যবহৃত হয়


রেডিওর ভবিষ্যৎ ও ডিজিটাল রূপান্তর

  • এখন রেডিও কেবল তরঙ্গভিত্তিক নয়, ইন্টারনেট রেডিও, পডকাস্ট, মোবাইল অ্যাপ ভিত্তিক স্ট্রিমিং রেডিওর নতুন চেহারা

  • Digital Audio Broadcasting (DAB) প্রযুক্তি কিছু দেশে চালু, যা আরও পরিষ্কার সিগন্যাল দেয়

  • বাংলাদেশেও “Radio Bhumi,” “Bangladesh Betar” এর অনলাইন সংস্করণ চালু হয়েছে


রেডিও আজও হারিয়ে যায়নি। এটি শুধু রূপ বদলেছে।
FM এবং AM এর আলাদা বৈশিষ্ট্য ও ব্যবহার আমাদের জীবনযাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।
আজকের ডিজিটাল জমানায়ও রেডিও মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরির এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *