মানব মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ ক্ষমতা আমরা কি ব্যবহার করি না? – বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের আলোকে বিশ্লেষণ

আপনার মস্তিষ্ক যা পারে, আপনি কি তা জানেন? খুঁজে দেখুন বিজ্ঞান ও বিশ্বাসের সংযোগ।

“মানুষ তার মস্তিষ্কের মাত্র ১০% ব্যবহার করে”—এই কথাটি বহু বছর ধরে জনপ্রিয়।
অনেকেই বিশ্বাস করেন, বাকি ৯০% অংশ ‘সুপার পাওয়ার’, ‘অলৌকিক ক্ষমতা’, বা ‘আধ্যাত্মিক শক্তি’র উৎস হতে পারে।
কিন্তু বিজ্ঞান এই বিশ্বাসকে কীভাবে ব্যাখ্যা করে?
আর ইসলাম ও অন্যান্য ধর্ম এই বিষয়ে কী বলে?


মস্তিষ্ক সম্পর্কে প্রচলিত বিশ্বাস: “১০% মিথ”

এই ধারণার উৎস কোথা থেকে এসেছে?

  • ১৯০৭ সালে William James বলেছিলেন, “মানুষ তার মানসিক শক্তির একটি ছোট অংশ ব্যবহার করে।”

  • পরবর্তীতে গণমাধ্যম ও কল্পবিজ্ঞান এটি ‘১০% ব্যবহার’ হিসেবে প্রচার করে।

সত্য কি?

NO – এই ধারণাটি বিজ্ঞানসম্মত নয়।
fMRI (Functional MRI)PET scan প্রযুক্তি দেখিয়েছে, আমরা বিভিন্ন সময়, বিভিন্ন কাজে মস্তিষ্কের প্রায় সব অংশই ব্যবহার করি।


কীভাবে আমরা মস্তিষ্ক ব্যবহার করি?

কার্যকলাপ জড়িত মস্তিষ্ক অঞ্চল
চিন্তা, বিশ্লেষণ Frontal Lobe
ভাষা ও শোনা Temporal Lobe
দৃষ্টি Occipital Lobe
স্পর্শ, গতিবিধি Parietal Lobe
আবেগ ও স্মৃতি Limbic System

প্রতিদিনকার জীবনের প্রায় প্রতিটি কাজে একাধিক মস্তিষ্ক অঞ্চল সক্রিয় থাকে।


তবে কি আমাদের ক্ষমতার সীমা আছে?

  • নিউরোপ্লাস্টিসিটি:
    মস্তিষ্ক নিজের কাঠামো নতুনভাবে গড়ে তুলতে পারে

  • ইচ্ছাশক্তি ও চর্চা:
    মনোযোগ, ধ্যান, ও অধ্যবসায়—এগুলো মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়

  • আমরা মস্তিষ্কের সম্ভাব্যতা পূর্ণভাবে ব্যবহার করছি না, কিন্তু শারীরিকভাবে ‘১০%’ ব্যবহার করছি—এ ধারণা ভুল


ইসলামের দৃষ্টিকোণ

আল্লাহর দান ও জ্ঞান সীমা

“তোমাদের জ্ঞান দেওয়া হয়েছে সামান্যই” — (সূরা আল ইসরা ১৭:৮৫)

  • মানুষ মহান ক্ষমতা পেয়েছে—আকাশে ও পৃথিবীতে চিন্তা করতে, কিন্তু সব কিছু জানতে পারবে না।

  • আক্বল (বুদ্ধি) ইসলাম অনুযায়ী এক গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামত।

    বুদ্ধিকে আল্লাহর পথে ব্যবহার করা ফরজের মতো গুরুত্বপূর্ণ।

প্রেরণা, ইলহাম ও নবুয়তি জ্ঞান

  • হযরত খিজির (আ.)-এর জ্ঞান ছিল “ইলহাম” ভিত্তিক—যা মানুষের সাধারণ বুদ্ধির বাইরে

  • নবীদের জ্ঞান ছিল আধ্যাত্মিক ও অপ্রাকৃত, কিন্তু তা আল্লাহর সীমায় নিয়ন্ত্রিত

তাফাক্কুর ও তাদাব্বুর

“তারা কি কোরআন নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে না?” — (সূরা আন নিসা ৪:৮২)
এই আয়াতে চিন্তার গুরুত্ব স্পষ্ট, যা মস্তিষ্ক ব্যবহারের আহ্বান।


তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের দৃষ্টিভঙ্গি

খ্রিস্টান ধর্মে:

  • ঈশ্বর মানুষকে দিয়েছেন “free will” ও “image of God”—যা মানসিক সক্ষমতার ইঙ্গিত

  • পবিত্র আত্মা (Holy Spirit) কখনো মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত উপলব্ধি তৈরি করে

হিন্দু দর্শনে:

  • “চেতনা” ও “মন” আত্মার অংশ নয়, শরীরের অঙ্গ হিসেবেও বিবেচিত

  • ধ্যান ও যোগ ব্যায়ামের মাধ্যমে মস্তিষ্ককে “উচ্চতর স্তরে” উন্নীত করা যায় বলে বিশ্বাস


সাইকোলজি ও নিউরোসায়েন্সে মস্তিষ্কের সামর্থ্য বাড়ানোর উপায়

  • নিয়মিত অধ্যয়ন ও চর্চা

  • মেডিটেশন ও ধ্যান

  • নতুন কিছু শেখা

  • ঘুম ও বিশ্রামের সঠিক রুটিন

  • সামাজিক ও আবেগীয় সচেতনতা


উপসংহার

মানুষ তার মস্তিষ্কের ১০% ব্যবহার করে—এই ধারণাটি একটি ভ্রান্ত মিথ
বাস্তবে, আমরা পুরো মস্তিষ্কই ব্যবহার করি, তবে অনেকের সম্ভাব্যতা বা প্রতিভা অব্যবহৃত থেকে যায়।
ইসলাম ও ধর্মীয় ব্যাখ্যাও মস্তিষ্ককে চিন্তা ও আলোচনার উপকরণ হিসেবে দেখে, যা মানুষের জ্ঞান ও আত্মবিকাশের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।


রেফারেন্স

  • Harvard Medical School – “Myth of the 10% Brain”

  • fMRI Brain Activity Reports, Nature Neuroscience

  • কুরআন: সূরা আল ইসরা, সূরা আন নিসা

  • Bible: Proverbs 2:6, Romans 12:2

  • Bhagavad Gita, Chapter 6 – Dhyana Yoga

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *