ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে বজ্রপাতে গৃহবধূর মৃত্যু: সচেতন হই, জীবন বাঁচাই

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বজ্রপাত একটি অদৃশ্য ঘাতক। প্রতি বছরই বজ্রপাতের শিকার হয়ে বহু মানুষ প্রাণ হারান। এবারে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলায়। একজন তরুণ গৃহবধূর অকাল মৃত্যু আবারও আমাদের মনে করিয়ে দিলো, সতর্কতা ও সচেতনতার বিকল্প নেই।

ঘটনার বিবরণ

গত ৩০ এপ্রিল ২০২৫, বুধবার বিকেলে নবীনগর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ওয়ারুক গ্রামে, বজ্রপাতে সানজিদা আক্তার (২২) নামের এক গৃহবধূ মারা যান।

তিনি বাড়ির পাশে পুকুরপাড় থেকে ধানের খড় আনতে গিয়েছিলেন। এ সময় আকাশে গুড়িগুড়ি মেঘ জমতে শুরু করে এবং হঠাৎ বজ্রপাত হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

পারিবারিক প্রেক্ষাপট

সানজিদা আক্তারের স্বামী আল-আমিন মিয়া একজন প্রবাসী, যিনি ৬ মাস ছুটি কাটিয়ে পরদিন (বৃহস্পতিবার) সকালে দুবাই ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এ উপলক্ষে বাড়িতে স্বজনদের উপস্থিতিও ছিল। কিন্তু এমন একটি আনন্দঘন মুহূর্ত বজ্রপাত কেড়ে নিলো পরিবারের এক প্রিয় মুখকে।

বাংলাদেশে বজ্রপাত: একটি চলমান হুমকি

বাংলাদেশে এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের হার সবচেয়ে বেশি। খোলা মাঠ, পুকুরপাড়, ধানক্ষেত, নদীর তীর, কিংবা উঁচু স্থানে অবস্থান করা এই সময়ে অত্যন্ত বিপজ্জনক। প্রাকৃতিকভাবে এই সময় গরম ও আদ্রতার কারণে বজ্রপাতের প্রবণতা বেড়ে যায়।

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে যা করবেন (সতর্কতা):

• বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, ধানক্ষেত বা জলাশয় এড়িয়ে চলুন

• ছাতা, মোবাইল, বাইসাইকেল ইত্যাদি ধাতব বস্তু এড়িয়ে চলুন

• যদি বাইরে থাকেন, মাটিতে বসে দুই হাঁটু জোড়া করে মাথা নিচু করুন

• গাছের নিচে দাঁড়াবেন না

• বাড়িতে থাকলে বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও মোবাইল ব্যবহার সীমিত করুন

• আবহাওয়া পূর্বাভাস অনুসরণ করুন এবং রেডিও বা টেলিভিশনে সতর্কবার্তা শুনুন

সানজিদা আক্তারের মৃত্যু আমাদের মনে করিয়ে দেয়—প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখনও অবহেলার বিষয় নয়। অল্প সময়ে নেমে আসা এই বজ্রপাত প্রাণ কেড়ে নিতে পারে। আমাদের সচেতনতা এবং সতর্কতাই পারে এইসব প্রাণহানি কমিয়ে আনতে।

আসুন, নিজে সচেতন হই, অন্যকেও সতর্ক করি। বজ্রপাতের সময় সাবধানতা অবলম্বন করে নিজের ও প্রিয়জনের জীবন রক্ষা করি।