ধর্ম প্রচারের ভাষা ও পদ্ধতিতে শিষ্টাচার এবং শরীয়তের সীমারেখা
🕌 প্রসঙ্গ
বাংলাদেশসহ উপমহাদেশের মসজিদে ওয়াজ বা ধর্মীয় বক্তৃতা জনপ্রিয় সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে: মসজিদে অতিরিক্ত জোরে মাইকের ব্যবহার কতটা যুক্তিসঙ্গত? ইসলাম ও শরীয়তের দৃষ্টিকোণ কী?
🌙 কোরআনের দিকনির্দেশনা
➡ আল-কোরআন, সূরা লুকমান, আয়াত ১৯
“তোমার কণ্ঠস্বরকে নম্র কর। নিশ্চয়ই সবচেয়ে নিকৃষ্ট শব্দ গাধার ডাক।”
👉 ইবনে কাসীর (রহ.) বলেন, এটি অযথা উচ্চস্বরে কথা বা শিষ্টাচারহীন শব্দকে নিন্দা করে।
➡ আল-কোরআন, সূরা আল-আ’রাফ, আয়াত ৫৫
“তোমরা তোমাদের প্রভুকে ডাকো বিনয় ও নিভৃতে। নিশ্চয়ই তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না।”
👉 এ আয়াত বিনয় ও শিষ্টাচারের সাথে আল্লাহর স্মরণ করার নির্দেশনা দেয়।
🕋 হাদিসের দিকনির্দেশনা
➡ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:
“প্রত্যেকে যেন অন্য মুসলমানকে কষ্ট না দেয়, তার পথ, বাজার বা মসজিদে।”
(আবু দাউদ, হাদিস 2629)
➡ হাদিসে বর্ণিত:
“যে ব্যক্তি মসজিদে নামাজরত মানুষের জন্য কষ্টদায়ক হয়, সে গুনাহগার।”
(মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা)
⚖️ ইসলামি ফিকহের অবস্থান
-
ইবনে হজম (রহ.) বলেন: ইবাদত বা খুতবা বা ওয়াজের সময় এমন উচ্চস্বরে আওয়াজ করা উচিত নয়, যা অন্য ইবাদতকারী বা সাধারণ মানুষের জন্য বিঘ্ন সৃষ্টি করে।
-
মালিকি, শাফেয়ি ও হানাবিলা মাযহাবের আলেমগণ বলেন: মসজিদে অতিরিক্ত আওয়াজ শিষ্টাচার বিরুদ্ধ এবং এটি না করা উত্তম।
🎙️ আধুনিক প্রসঙ্গ ও যুক্তি
✅ পক্ষের যুক্তি:
-
বৃহৎ শ্রোতাদের উপকারে আসে।
-
ধর্ম প্রচারে কার্যকর মাধ্যম।
✅ বিপক্ষের যুক্তি:
-
নামাজরত বা আরামরত মানুষ বিরক্ত হয়।
-
প্রতিবেশী অমুসলিম বা অসুস্থদের জন্য কষ্টকর।
-
শহরের শব্দ দূষণ বৃদ্ধি করে।
📝 উপসংহার
👉 ইসলামি শিক্ষা ও শরীয়ত অতিরিক্ত শব্দ সৃষ্টিকে নিরুৎসাহিত করে, বিশেষত মসজিদ বা ধর্মীয় স্থানে।
👉 প্রযুক্তি ব্যবহারে সতর্ক থাকা ও প্রয়োজন বুঝে সীমার মধ্যে থাকা উত্তম।
➡ সমাধান:
-
মাইকের ভলিউম এমন হওয়া উচিত যাতে মসজিদের প্রাঙ্গণ ও প্রয়োজনীয় এলাকায় পৌঁছায়, অপ্রয়োজনীয় দূর পর্যন্ত নয়।
-
ওয়াজ আয়োজনের আগে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রতিবেশীর সঙ্গে সমন্বয় করা।
#ইসলামিকশিক্ষা #ওয়াজ #মাইকনিয়ম #শরীয়ত #মসজিদআচরণ #ধর্মীয়শিষ্টাচার