আমরা প্রতিদিন আকাশে তাকিয়ে দেখি সূর্য, চাঁদ, তারা আর নক্ষত্রমণ্ডলী। কিন্তু আপনি কি জানেন, আমাদের দেখা মহাবিশ্ব পুরো মহাবিশ্বের কেবল ৫%?
বাকি যা কিছু আছে, তার এক বিরাট অংশ ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি, যা আমরা দেখি না, কিন্তু তার প্রভাব প্রতিটি গ্যালাক্সিতে, এমনকি মহাবিশ্বের প্রসারণেও অনুভব করি।
মহাবিশ্বের সীমানা কি আছে?
বিজ্ঞানীদের মতে, মহাবিশ্ব ১৩.৮ বিলিয়ন বছর আগে বিগ ব্যাং এর মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে।
এই প্রসারণশীল মহাবিশ্ব এখনও বাড়ছে—তবে প্রশ্ন হলো:
এর কি কোনো শেষ সীমা আছে?
তিনটি ব্যাখ্যা রয়েছে:
-
সসীম কিন্তু সীমাহীন (Finite but Unbounded):
যেমন পৃথিবীর পৃষ্ঠ—চলতে থাকলে বারবার একই জায়গায় ফিরে আসা যায়, কোনো কিনারা নেই। -
সসীম এবং সীমাবদ্ধ:
এক নির্দিষ্ট দূরত্বে মহাবিশ্ব শেষ হয়ে যেতে পারে। -
অনন্ত (Infinite):
মহাবিশ্বের কোনো শেষ নেই—এটি অসীমভাবে প্রসারিত।
বর্তমানে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মতবাদ:
মহাবিশ্ব অন্তত “observable universe”-এর বাইরেও প্রসারিত, কিন্তু আমাদের পর্যবেক্ষণ সীমাবদ্ধ।
Observable Universe কী?
এটি সেই অংশ, যেখানকার আলো আজ পর্যন্ত আমাদের পৃথিবীতে পৌঁছাতে পেরেছে।
এর ব্যাস প্রায় ৯৩ বিলিয়ন আলোকবর্ষ!
ডার্ক ম্যাটার – অদৃশ্য কিন্তু প্রভাবশালী
ডার্ক ম্যাটার (Dark Matter) হলো এমন একধরনের পদার্থ যা:
-
আলো শোষণ বা বিকিরণ করে না
-
দেখতে পাওয়া যায় না
-
কিন্তু মহাবিশ্বের ভর ও গ্যালাক্সির গঠন ব্যাখ্যা করতে এটির অস্তিত্ব অপরিহার্য
প্রমাণ:
-
গ্যালাক্সির ঘূর্ণনের গতি ডার্ক ম্যাটার ছাড়া ব্যাখ্যাতীত
-
মহাকর্ষীয় লেন্সিং (gravitational lensing) — দূরবর্তী গ্যালাক্সির আলো বাঁকিয়ে দেয়
কী থেকে তৈরি?
এখনও অজানা। তবে গবেষকরা ধারণা করেন এটি হতে পারে:
-
Weakly Interacting Massive Particles (WIMPs)
-
Axions
-
Supersymmetric particles
ডার্ক এনার্জি ও প্রসারণ
মহাবিশ্ব শুধু প্রসারিতই হচ্ছে না, বরং প্রসারণের গতি বাড়ছে।
এই গতি বাড়ানোর জন্য দায়ী এক অজানা শক্তি — ডার্ক এনার্জি।
বর্তমানে মহাবিশ্বের মোট ঘনত্বের আনুমানিক:
-
৫% দৃশ্যমান পদার্থ (Normal Matter)
-
২৭% ডার্ক ম্যাটার
-
৬৮% ডার্ক এনার্জি
মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ
ডার্ক এনার্জির প্রকৃতি বুঝতে পারলে আমরা জানতে পারবো:
-
মহাবিশ্ব একদিন ফ্রিজ আউট হবে?
-
না কি বিগ রিপ (Big Rip) এর মতো এক ধ্বংসাত্মক অবসান ঘটবে?
উপসংহার
মহাবিশ্বের সীমানা ও ডার্ক ম্যাটার আমাদের জানার পরিধির সীমা চ্যালেঞ্জ করে।
এই দুটি ধারণা কেবল জ্যোতির্বিজ্ঞান নয়, বরং দর্শন, পদার্থবিজ্ঞান এবং কল্পনার এক বিস্ময়কর সংমিশ্রণ।
আমরা এখনো জানি খুব সামান্য—আর সেই ‘অজানার জানাই’ আমাদের এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আরও গভীর গবেষণার পথে।
রেফারেন্স
-
NASA (nasa.gov/universe/dark-matter)
-
ESA – European Space Agency: “Planck Mission Data”
-
Harvard-Smithsonian Center for Astrophysics
-
Scientific American: “What Is the Shape of the Universe?”
-
CERN: Dark Matter Explained