মহাবিশ্বে কি সত্যিই উল্টো দিকও আছে? ব্ল্যাক হোল ও হোয়াইট হোল নিয়ে তত্ত্ব
মহাকাশের এমন কিছু বস্তু আছে যা আলোও পার হতে পারে না, আবার এমন কল্পিত স্থান আছে যেখান থেকে কোনো কিছুই বেরিয়ে আসে।
এই দুই বিস্ময়কর ধারণা হলো ব্ল্যাক হোল (Black Hole) ও হোয়াইট হোল (White Hole)।
একটি বাস্তব, অন্যটি এখনো তাত্ত্বিক।
প্রশ্ন হলো—এগুলো কী, কীভাবে কাজ করে, এবং এগুলো নিয়ে বিজ্ঞান ও ধর্ম কী বলে?
ব্ল্যাক হোল কী?
ব্ল্যাক হোল হলো মহাকর্ষীয়ভাবে এতটাই ঘন বস্তু, যার মাধ্যাকর্ষণ বল এত বেশি যে কিছুই—এমনকি আলোও—সেখান থেকে বের হতে পারে না।
বৈশিষ্ট্য:
-
কেন্দ্র: সিঙ্গুলারিটি (Singularity) – একটি বিন্দু যেখানে পদার্থ অসীম ঘনত্বে সংকুচিত
-
চারপাশে: Event Horizon – সেই সীমা, যা অতিক্রম করলে আর ফিরে আসা যায় না
-
উৎপত্তি: সাধারণত বিশাল নক্ষত্রের মৃত্যুর পর (Supernova collapse)
প্রমাণ ও পর্যবেক্ষণ:
-
২০১৯ সালে প্রথমবার Event Horizon Telescope একটি সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলে (Messier 87)
-
ব্ল্যাক হোল সরাসরি দেখা না গেলেও এর গ্র্যাভিটেশনাল প্রভাব, আলো বাঁকানো, এক্স-রে বিকিরণ পর্যবেক্ষণযোগ্য
হোয়াইট হোল কী?
হোয়াইট হোল হলো ব্ল্যাক হোলের বিপরীত ধারণা—একটি অঞ্চল যেখানে কিছু প্রবেশ করতে পারে না, বরং যেখান থেকে সব কিছু বেরিয়ে আসে।
তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:
-
সময় ও স্থান উল্টানো অবস্থায় ব্ল্যাক হোলের গাণিতিক সমাধান
-
এটি কোনো পদার্থ গ্রহণ করে না, কেবল বহিষ্কার করে
-
বাস্তবে কোনো হোয়াইট হোল এখনো দেখা যায়নি
ব্ল্যাক হোল বনাম হোয়াইট হোল: তুলনামূলক চিত্র
বৈশিষ্ট্য | ব্ল্যাক হোল | হোয়াইট হোল |
---|---|---|
গঠন | বাস্তব | তাত্ত্বিক |
পদার্থ প্রবেশ | হ্যাঁ | না |
পদার্থ নির্গমন | না | হ্যাঁ |
পর্যবেক্ষণ | ২০১৯ সালে ছবি | নেই |
ওয়ার্মহোল ও টাইম ট্রাভেল সম্ভাবনা
বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, যদি ব্ল্যাক হোল ও হোয়াইট হোলকে সংযুক্ত করা যায়, তবে Wormhole বা মহাবিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে তাৎক্ষণিক ভ্রমণের সুড়ঙ্গপথ সম্ভব হতে পারে।
তবে সমস্যা:
-
Wormhole স্থিতিশীল রাখতে হলে নেগেটিভ এনার্জি প্রয়োজন, যা এখনো শুধুই তত্ত্ব।
-
এটি হয়তো টাইম ট্রাভেলের ক্ষেত্রেও ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।
ইসলামের আলোকে বিশ্লেষণ
ইসলামে ব্ল্যাক হোল বা হোয়াইট হোলের মতো মহাজাগতিক বিষয়গুলো সরাসরি উল্লেখ নেই, তবে কিছু আয়াত ও কোরআনিক বর্ণনায় মহাকাশ, স্থানান্তর, আলো ও অন্ধকার নিয়ে ইঙ্গিত পাওয়া যায়:
১. সূরা তাকভীর (৮১:১–২)
“যখন সূর্য গুটিয়ে ফেলা হবে, যখন তারা নক্ষত্র ঝরে পড়বে…”
এই আয়াতগুলোতে মহাবিশ্বের ধ্বংসাত্মক ঘটনা ও মহাকাশীয় পরিবর্তনের ইঙ্গিত রয়েছে।
২. আল্লাহর সৃষ্টি অগণিত ও অনন্ত
“তুমি কি মনে করো আমি শুধু এই দুনিয়া সৃষ্টি করেছি?”
ব্ল্যাক হোলের মতো সৃষ্টি গুলো হয়তো সেই অজানা জগতের অংশ—যা আল্লাহর ইচ্ছাতেই নিয়ন্ত্রিত।
৩. মিরাজ ও স্থান-কাল অতিক্রম
হজরত মুহাম্মদ (স.) এর মিরাজে ভিন্ন ভিন্ন দুনিয়ার মধ্যে চলাচল, সময় সঙ্কোচন, এবং আসমানের স্তর ধারণা কিছুটা মাল্টিডাইমেনশন ভাবনার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ।
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের দৃষ্টিতে
খ্রিস্টান ও ইহুদি ধর্মে:
-
মহাবিশ্বের ধ্বংস ও পুনর্গঠনের কথা বলা হয়েছে (Book of Revelation)।
-
আলো-অন্ধকার, শূন্যতা, ‘abyss’ বা অতল গহ্বর—যা কিছুটা ব্ল্যাক হোলের ভাবনার সাথে মিলে যায়।
হিন্দুধর্মে:
-
কালাচক্র (Time Cycle) ধারণা অনুসারে ব্রহ্মাণ্ড গঠিত ও ধ্বংস হয়
-
শিবের “তাণ্ডব নৃত্য” মহাজাগতিক ধ্বংস ও পুনরায় সৃষ্টির চক্রের প্রতীক—ব্ল্যাক হোল ও হোয়াইট হোলকে কেউ কেউ এর সঙ্গে তুলনা করেন
উপসংহার
ব্ল্যাক হোল বাস্তব, আমাদের চোখের আড়ালে থাকা এক মহাজাগতিক দানব, যা সময়, আলো, পদার্থ—সবকিছু গিলে ফেলে।
হোয়াইট হোল এখনো কল্পনা ও তত্ত্বে সীমাবদ্ধ। তবে আজকের কল্পনা আগামী দিনের বাস্তবতা হতে পারে।
বিজ্ঞান তার উত্তর খুঁজছে, আর ধর্ম আমাদের শেখায়—সব সৃষ্টি আল্লাহর ইচ্ছার সীমার মধ্যে।
রেফারেন্স
-
NASA: “What is a Black Hole?”
-
Event Horizon Telescope Project (2019)
-
Kip Thorne: Black Holes and Time Warps
-
Stephen Hawking: A Brief History of Time
-
কুরআন শরীফ: সূরা তাকভীর, সূরা আম্বিয়া
-
Bible: Revelation 6–21
-
Hindu Puranas: Creation-Dissolution Cycles