বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের শিক্ষা, কৃষি ও যোগাযোগের প্রবেশদ্বার
যশোর জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী এবং অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলা। এটি দেশের প্রথম স্বাধীন জেলা হিসেবে পরিচিত এবং কৃষি, শিল্প, শিক্ষা ও বাণিজ্যের কেন্দ্র হিসেবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছে। দেশের অন্যতম ব্যস্ত স্থলবন্দর বেনাপোল যশোর জেলায় অবস্থিত, যা ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার।
গঠনের ইতিহাস ও পটভূমি
-
মুঘল আমলে যশোর অঞ্চল ছিল সমৃদ্ধ জনপদ ও প্রশাসনিক কেন্দ্র।
-
১৭৮১ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে যশোর জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
-
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় যশোর প্রথম শত্রুমুক্ত জেলা হিসেবে স্বাধীনতার ইতিহাসে বিশেষ স্থান অধিকার করে।
প্রশাসনিক তথ্য
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
---|---|
জেলার নাম | যশোর জেলা |
গঠনের বছর | আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭৮১ সাল |
জেলা সদর দপ্তর | যশোর শহর |
উপজেলার সংখ্যা | ৮টি উপজেলা |
ইউনিয়ন পরিষদ | প্রায় ৯২টি ইউনিয়ন |
মোট আয়তন | আনুমানিক ২,৬০৬ বর্গকিলোমিটার |
মোট জনসংখ্যা (২০২৫) | প্রায় ৩২ লক্ষাধিক |
ধর্মীয় পরিসংখ্যান (আনুমানিক)
ধর্ম | জনসংখ্যার অনুপাত |
---|---|
ইসলাম | প্রায় ৮৫% |
হিন্দুধর্ম | প্রায় ১৪% |
অন্যান্য | প্রায় ১% |
প্রশাসনিক বিভাগসমূহ
যশোর জেলার অন্তর্গত ৮টি উপজেলা:
-
যশোর সদর উপজেলা
-
অভয়নগর উপজেলা
-
মনিরামপুর উপজেলা
-
কেশবপুর উপজেলা
-
ঝিকরগাছা উপজেলা
-
শার্শা উপজেলা
-
চৌগাছা উপজেলা
-
বাঘারপাড়া উপজেলা
স্থানীয় সরকার কাঠামো
-
জেলা প্রশাসক (DC) জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
-
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO) উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন।
-
ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে স্থানীয় শাসন পরিচালিত হয়।
-
যশোর পৌরসভা ও অন্যান্য পৌরসভাগুলো নিজ নিজ এলাকায় প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
নেতৃত্ব ও শাসনব্যবস্থা
-
বিভাগীয় কমিশনার: খুলনা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা।
-
জেলা প্রশাসক: যশোর জেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
-
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়রগণ স্থানীয় প্রশাসনের দায়িত্বে রয়েছেন।
আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা
-
প্রতিটি উপজেলায় থানা এবং ফাঁড়ি রয়েছে।
-
বেনাপোল স্থলবন্দর এলাকার নিরাপত্তায় বিশেষ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (BGB) ইউনিট কর্মরত।
-
জেলা শহরে ও উপজেলায় পুলিশ প্রশাসনের কার্যক্রম সচল রয়েছে।
অর্থনীতি ও শিল্প
-
কৃষি: ধান, পাট, গম, সবজি ও মাছ চাষ।
-
বেনাপোল স্থলবন্দর: বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্র।
-
রপ্তানিমুখী শিল্প: পাট শিল্প, চামড়া শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ।
-
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠান (SME) দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠান
-
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (JUST), সরকারি এমএম কলেজ, কেশবপুর সরকারি কলেজ।
-
মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সংখ্যা অত্যন্ত বেশি।
-
শিক্ষার হার (২০২৪): আনুমানিক ৮০%
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
-
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল: জেলার প্রধান স্বাস্থ্যকেন্দ্র।
-
প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
-
উন্নত মানের বেসরকারি ক্লিনিক ও বিশেষায়িত হাসপাতাল রয়েছে।
যোগাযোগ ও অবকাঠামো
-
সড়ক: যশোর-খুলনা, যশোর-ঢাকা মহাসড়ক।
-
রেল: যশোর রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল।
-
বিমান: যশোর বিমানবন্দর (আভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল সুবিধা)।
-
স্থলবন্দর: বেনাপোল স্থলবন্দর (ভারতের সাথে সংযোগ)।
পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
-
ঐতিহাসিক: চাচড়া জমিদার বাড়ি, শংকরপাশা নীলকুঠি।
-
প্রাকৃতিক: নওয়াপাড়া নদীবন্দর, জয়পুর ও বাগআঁচড়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।
-
সাংস্কৃতিক: যশোরের পল্লীগীতি ও লোকসংগীতের ঐতিহ্য।
সংস্কৃতি ও জীবনধারা
-
খাদ্য: স্থানীয় মিষ্টি পাটালি, ক্ষীরের মণ্ডা, দেশীয় সবজি ও ফল।
-
পোশাক ও হস্তশিল্প: তাঁতের শাড়ি, হস্তনির্মিত সামগ্রী।
-
শিল্প ও সংস্কৃতি: নাটক, যাত্রাপালা, পল্লীগীতি ও নাচের সমৃদ্ধ ধারা।
-
ক্রীড়া: ফুটবল, ক্রিকেট এবং হাডুডু বিশেষ জনপ্রিয়।
সারাংশ
যশোর জেলা তার মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, কৃষিভিত্তিক সমৃদ্ধি, স্থলবন্দর কার্যক্রম এবং প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জন্য বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ মর্যাদা লাভ করেছে। দেশের বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার এবং কৃষি ও শিক্ষা উন্নয়নের মেলবন্ধনে যশোর জেলা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
নিউজ ও আর্টিকেল
নিচের শিরোনামগুলোতে ক্লিক করে এই অংশ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধসমূহ পড়ুন:
আমাদের লক্ষ্য (ওয়েবসাইট ভিশন)
এই ওয়েবসাইটে আমরা তুলে ধরছি বাংলাদেশের প্রতিটি:
-
বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সংক্রান্ত তথ্য
-
ইতিহাস, জনসংখ্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশ
-
পর্যটন স্থান, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, স্থানীয় উৎসব ও খাদ্যসংস্কৃতি
-
তথ্যনির্ভর, নির্ভরযোগ্য ও আপডেটেড একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় তথ্যভাণ্ডার
যোগাযোগ করুন
আপনার এলাকার তথ্য আপডেট বা সংশোধনের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
আপনার অংশগ্রহণই আমাদের এই তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।
ধন্যবাদ!
আপনি এখন বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্ত জানার যাত্রায় আছেন – আমাদের সাথেই থাকুন!