বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমুদ্রবন্দর ও শিল্প নগরী
খুলনা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক, শিল্প ও সমুদ্রবন্দরভিত্তিক জেলা। বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম শহর খুলনা এ জেলার সদর দপ্তর এবং মংলা সমুদ্রবন্দর ও সুন্দরবনের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দিক থেকেও এ জেলার গুরুত্ব অপরিসীম।
গঠনের ইতিহাস ও পটভূমি
-
মুঘল আমলে খুলনা অঞ্চল ছিল গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আদায় কেন্দ্র।
-
১৮৪২ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে খুলনা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়।
-
১৯৪৭ সালে বিভাজনের পর খুলনা পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হয়।
-
১৯৭১ সালে স্বাধীনতার পর খুলনা জেলা বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠে।
প্রশাসনিক তথ্য
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
---|---|
জেলার নাম | খুলনা জেলা |
গঠনের বছর | আনুষ্ঠানিকভাবে ১৮৪২ সাল |
জেলা সদর দপ্তর | খুলনা শহর |
উপজেলার সংখ্যা | ৯টি উপজেলা |
ইউনিয়ন পরিষদ | প্রায় ৬৮টি ইউনিয়ন |
মোট আয়তন | আনুমানিক ৪,৩৯৪ বর্গকিলোমিটার |
মোট জনসংখ্যা (২০২৫) | প্রায় ৩২ লক্ষাধিক |
ধর্মীয় পরিসংখ্যান (আনুমানিক)
ধর্ম | জনসংখ্যার অনুপাত |
---|---|
ইসলাম | প্রায় ৭২% |
হিন্দুধর্ম | প্রায় ২৬% |
অন্যান্য | প্রায় ২% |
প্রশাসনিক বিভাগসমূহ
খুলনা জেলার অন্তর্গত ৯টি উপজেলা:
-
খুলনা সদর উপজেলা
-
দাকোপ উপজেলা
-
বটিয়াঘাটা উপজেলা
-
ডুমুরিয়া উপজেলা
-
ফুলতলা উপজেলা
-
রূপসা উপজেলা
-
পাইকগাছা উপজেলা
-
তেরখাদা উপজেলা
-
কয়রা উপজেলা
স্থানীয় সরকার কাঠামো
-
জেলা প্রশাসক (DC) জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
-
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO) উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন।
-
ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে স্থানীয় শাসন পরিচালিত হয়।
-
খুলনা সিটি কর্পোরেশন (KCC) স্বতন্ত্রভাবে পরিচালিত হয়।
নেতৃত্ব ও শাসনব্যবস্থা
-
বিভাগীয় কমিশনার: খুলনা বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তা।
-
জেলা প্রশাসক: খুলনা জেলার প্রধান নির্বাহী।
-
স্থানীয় পর্যায়ে: উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়রগণ দায়িত্ব পালন করেন।
আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা
-
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (KMP) শহর এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করে।
-
প্রতিটি উপজেলায় থানা, পুলিশ সুপার, এবং ফায়ার সার্ভিস ইউনিট বিদ্যমান।
-
কোস্ট গার্ড এবং নৌ-পুলিশ সমুদ্র উপকূল ও নদী এলাকায় সক্রিয়।
অর্থনীতি ও শিল্প
-
খুলনা শিপইয়ার্ড, খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলস, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস, এবং কয়লা ও সার কারখানা সমৃদ্ধ শিল্পভিত্তি।
-
মংলা সমুদ্রবন্দর খুলনা জেলার অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি।
-
চিংড়ি চাষ, মাছ ধরার শিল্প এবং কৃষি পণ্য উৎপাদন অর্থনীতির প্রধান খাত।
-
সুন্দরবনভিত্তিক বনজ সম্পদ আহরণও অর্থনৈতিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ।
শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠান
-
শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)
-
খুলনা মেডিকেল কলেজ, খুলনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
-
মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক
-
শিক্ষার হার (২০২৪): আনুমানিক ৭৮%
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
-
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
-
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, আধুনিক ক্লিনিক এবং বেসরকারি হাসপাতাল সমূহ।
-
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খুলনায় উন্নত কার্ডিয়াক হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে উঠেছে।
যোগাযোগ ও অবকাঠামো
-
সড়ক: খুলনা-ঢাকা মহাসড়ক, খুলনা-মংলা এক্সপ্রেসওয়ে।
-
রেল: খুলনা রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল।
-
নৌপথ: মংলা বন্দর এবং নদীবন্দরগুলো
-
নির্মাণাধীন উন্নয়ন: রূপসা রেলসেতু, মেট্রোরেল প্রকল্প পরিকল্পনাধীন।
পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
-
প্রাকৃতিক: সুন্দরবন (বিশ্ব ঐতিহ্য), কাটকা, কোকিলমনি, হিরণ পয়েন্ট।
-
ঐতিহাসিক: খান জাহান আলীর মাজার (বাগেরহাট সীমান্তবর্তী)
-
সমুদ্রবন্দর: মংলা বন্দর
-
পার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র: খুলনা শহীদ হাদিস পার্ক, শহীদ আবু নাসের স্টেডিয়াম।
সংস্কৃতি ও জীবনধারা
-
খাদ্য: চিংড়ি, ইলিশ মাছ, স্থানীয় মিষ্টি।
-
পোশাক: স্থানীয় হস্তশিল্প, জামদানি ও তাঁতের শাড়ি।
-
শিল্প ও সংস্কৃতি: নাটক, সংগীত, বাউল গান।
-
ক্রীড়া: ক্রিকেট ও ফুটবল ব্যাপক জনপ্রিয়।
সারাংশ
খুলনা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের শিল্প, কৃষি ও পরিবেশগত গুরুত্বের এক অন্যতম কেন্দ্র। মংলা সমুদ্রবন্দর, সুন্দরবনের সন্নিকটতা এবং সমৃদ্ধ শিল্পখাত খুলনাকে দেশের অর্থনৈতিক মানচিত্রে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এবং পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে খুলনা জেলা বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অগ্রগতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।
নিউজ ও আর্টিকেল
নিচের শিরোনামগুলোতে ক্লিক করে এই অংশ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধসমূহ পড়ুন:
আমাদের লক্ষ্য (ওয়েবসাইট ভিশন)
এই ওয়েবসাইটে আমরা তুলে ধরছি বাংলাদেশের প্রতিটি:
-
বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সংক্রান্ত তথ্য
-
ইতিহাস, জনসংখ্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশ
-
পর্যটন স্থান, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, স্থানীয় উৎসব ও খাদ্যসংস্কৃতি
-
তথ্যনির্ভর, নির্ভরযোগ্য ও আপডেটেড একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় তথ্যভাণ্ডার
যোগাযোগ করুন
আপনার এলাকার তথ্য আপডেট বা সংশোধনের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
আপনার অংশগ্রহণই আমাদের এই তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।
ধন্যবাদ!
আপনি এখন বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্ত জানার যাত্রায় আছেন – আমাদের সাথেই থাকুন!