যাদু বিদ্যা: সত্য নাকি মিথ্যা? ধর্মগ্রন্থের দৃষ্টিকোণ
February 22, 2025যাদু বিদ্যা বা ম্যাজিক হাজার বছর ধরে মানুষের কৌতূহলের বিষয় হয়ে আছে। বিভিন্ন সংস্কৃতি ও ধর্মে যাদুর ধারণা বিদ্যমান, তবে একে কেউ ভালো হিসেবে দেখে, আবার কেউ খারাপ হিসেবে। এই নিবন্ধে আমরা যাদু বিদ্যা সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা করব।
যাদু বিদ্যার সংজ্ঞা
যাদু বিদ্যা বলতে সাধারণত এমন কিছু শক্তিকে বোঝানো হয়, যা স্বাভাবিক বৈজ্ঞানিক নিয়মের ব্যাখ্যার বাইরে বলে মনে হয়। এটি দুই ধরনের হতে পারে:
- সাদা যাদু: এটি সাধারণত নির্দোষ, কৌতুক বা বিনোদনের জন্য ব্যবহৃত হয়।
- কালো যাদু: এটি ক্ষতিকর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়, যেমন কাউকে কষ্ট দেওয়া বা অশুভ শক্তি আহ্বান করা।
যাদু বিদ্যা সম্পর্কে কোরআনের বক্তব্য
ইসলামে যাদু বিদ্যার অস্তিত্ব স্বীকৃত, তবে এটি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে:
“তারা সলোমনের (সুলাইমান) রাজত্বকালে শয়তানদের দ্বারা যাদু বিদ্যা অনুসরণ করত। কিন্তু সুলাইমান (আ.) কখনো কাফের হননি, বরং শয়তানরাই কুফরি করেছিল; তারা মানুষকে যাদু শিক্ষা দিত…”
(সূরা বাকারা: ১০২)
এ আয়াত থেকে বোঝা যায়, যাদু বিদ্যা বাস্তব এবং এটি শয়তানের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে, যাদু বিদ্যা শয়তানের সাহায্য নিয়ে করা হয় এবং এটি কঠোরভাবে হারাম।
হাদিসে যাদুর আলোচনা
রাসূলুল্লাহ (সা.) যাদুকে একটি বড় গুনাহ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন:
“সাতটি ধ্বংসাত্মক পাপ থেকে বেঁচে থাকো… তার মধ্যে একটি হলো যাদু করা।”
(সহিহ বুখারি, হাদিস: ৫৭৬৪)
অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে যে, যারা যাদু চর্চা করে বা এর ওপর বিশ্বাস রাখে, তারা শিরক বা আল্লাহর সাথে অংশীদারিত্ব করার মতো বড় অপরাধ করছে।
বাইবেলে যাদু বিদ্যা
খ্রিস্টধর্মেও যাদু বিদ্যা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাইবেলে বলা হয়েছে:
“তোমাদের মধ্যে যারা যাদু বিদ্যা চর্চা করে, তাদের হত্যা করা হোক।”
(এক্সোডাস ২২:১৮)
নতুন নিয়মে (New Testament) যাদুকে পাপ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে:
“যারা যাদু বিদ্যা করে, তারা স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে না।”
(গালাতীয় ৫:২০-২১)
হিন্দুধর্ম ও যাদু বিদ্যা
হিন্দু ধর্মগ্রন্থেও যাদু বিদ্যার উল্লেখ রয়েছে। এটি তন্ত্র, মন্ত্র ও যজ্ঞের মাধ্যমে পরিচালিত হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। তবে গীতায় বলা হয়েছে:
“যারা অসৎ পথে চলে, তারা মোহগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মায়ার দ্বারা প্রতারিত হয়।”
(শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা ৭:১৫)
এর মানে, যাদুর প্রতি আসক্তি মানুষকে সত্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে।
বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে যাদু
আধুনিক বিজ্ঞান যাদুর অস্তিত্ব স্বীকার করে না। মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, যাদু বিদ্যা মূলত মানুষের মনস্তাত্ত্বিক বিভ্রান্তি, হাতের কারসাজি বা প্রাকৃতিক ঘটনাকে অতিপ্রাকৃত বলে মনে করার প্রবণতা।
উপসংহার
যাদু বিদ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ রয়েছে। ধর্মীয়ভাবে এটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ, বিশেষ করে ইসলাম ও খ্রিস্টধর্মে। অন্যদিকে, বিজ্ঞান এটিকে মনের বিভ্রান্তি ও প্রতারণার কৌশল হিসেবে দেখে। তাই, সত্যিকারের সুরক্ষার জন্য বিশ্বাস, জ্ঞান ও সচেতনতা থাকা জরুরি।
আপনার মতামত জানাতে ভুলবেন না! আপনি কি কখনো যাদু বিদ্যার কোনো অভিজ্ঞতা পেয়েছেন?