আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা ও আত্মত্যাগের প্রতীক

February 21, 2025 By Shabab Al Sharif

ভূমিকা

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিশ্বব্যাপী ভাষাগত বৈচিত্র্য এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি, এই দিনটি পালিত হয় ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে, যারা মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি লাভের পর, পাকিস্তান দুটি অংশে বিভক্ত হয়—পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) এবং পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ)। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের সরকার উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে ঘোষণা করে, যা পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী জনগণের জন্য ছিল অত্যন্ত অন্যায়। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বাঙালিরা প্রতিবাদ করে এবং ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্ররা আন্দোলন গড়ে তোলে। পুলিশের গুলিতে সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারসহ অনেকেই শহীদ হন। তাদের আত্মত্যাগের ফলে ১৯৫৬ সালে বাংলা পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

বাংলাদেশের উদ্যোগে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” হিসেবে ঘোষণা করে, যা ২০০০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। এই দিবসটি ভাষাগত বৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং বহুভাষিক শিক্ষা প্রসারের গুরুত্ব তুলে ধরে।

মাতৃভাষার গুরুত্ব

  • সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সংরক্ষণ: মাতৃভাষা মানুষের পরিচয় বহন করে এবং তার সাংস্কৃতিক শেকড়কে দৃঢ় করে।
  • শিক্ষা ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করলে শিশুদের শেখার দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
  • সামাজিক সংহতি: ভাষা মানুষের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে এবং সামাজিক ঐক্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।

ভাষা সংরক্ষণের চ্যালেঞ্জ

বর্তমানে বিশ্বে অনেক ভাষা বিলুপ্তির পথে, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, প্রতি দুই সপ্তাহে একটি ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। তাই মাতৃভাষা সংরক্ষণের জন্য সরকার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি।

উপসংহার

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস শুধুমাত্র একটি স্মরণীয় দিন নয়, এটি ভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলনের প্রতীক। ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এবং নতুন প্রজন্মকে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে আমরা এই দিবসের প্রকৃত মূল্যায়ন করতে পারি।