বাংলাদেশের শস্যভাণ্ডার ও ঐতিহ্যবাহী শিল্পনগরী
দিনাজপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ এবং ঐতিহ্যবাহী জেলা। কৃষি উৎপাদন, বিশেষ করে ধান, লিচু এবং আমের জন্য বিখ্যাত এ জেলা দেশের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ঐতিহাসিক নিদর্শন, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দিনাজপুরকে একটি বিশেষ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে।
গঠনের ইতিহাস ও পটভূমি
-
মুঘল আমলে দিনাজপুর অঞ্চল একটি সমৃদ্ধ জনপদ ছিল।
-
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৭৮৬ সালে দিনাজপুরকে একটি জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।
-
ঐতিহাসিকভাবে জমিদারদের প্রভাব এ অঞ্চলে ছিল সুস্পষ্ট।
-
স্বাধীনতার পর দিনাজপুর জেলা বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে।
প্রশাসনিক তথ্য
বৈশিষ্ট্য | বিবরণ |
---|---|
জেলার নাম | দিনাজপুর জেলা |
গঠনের বছর | আনুষ্ঠানিকভাবে ১৭৮৬ সাল |
জেলা সদর দপ্তর | দিনাজপুর শহর |
উপজেলার সংখ্যা | ১৩টি উপজেলা |
ইউনিয়ন পরিষদ | প্রায় ১০০+ ইউনিয়ন |
মোট আয়তন | প্রায় ৩,৪৩৭ বর্গকিলোমিটার |
মোট জনসংখ্যা (২০২৫) | প্রায় ৪০ লক্ষাধিক |
ধর্মীয় পরিসংখ্যান (আনুমানিক)
ধর্ম | জনসংখ্যার অনুপাত |
---|---|
ইসলাম | প্রায় ৭৬% |
হিন্দুধর্ম | প্রায় ২২% |
অন্যান্য | প্রায় ২% |
প্রশাসনিক বিভাগসমূহ
দিনাজপুর জেলার অন্তর্গত ১৩টি উপজেলা:
-
দিনাজপুর সদর উপজেলা
-
পার্বতীপুর উপজেলা
-
ফুলবাড়ী উপজেলা
-
নবাবগঞ্জ উপজেলা
-
বিরামপুর উপজেলা
-
ঘোড়াঘাট উপজেলা
-
বোচাগঞ্জ উপজেলা
-
বিরল উপজেলা
-
কাহারোল উপজেলা
-
খানসামা উপজেলা
-
চিরিরবন্দর উপজেলা
-
হাকিমপুর (হিলি) উপজেলা
-
বিরল উপজেলা
স্থানীয় সরকার কাঠামো
-
জেলা প্রশাসক (DC) জেলার প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
-
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (UNO) উপজেলা পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেন।
-
ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা স্থানীয় শাসন পরিচালনা করেন।
-
দিনাজপুর পৌরসভা এবং হাকিমপুর পৌরসভা কার্যক্রম পরিচালিত হয়।
নেতৃত্ব ও শাসনব্যবস্থা
-
বিভাগীয় কমিশনার: রংপুর বিভাগের শীর্ষ প্রশাসক।
-
জেলা প্রশাসক: দিনাজপুর জেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
-
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পৌর মেয়ররা স্থানীয় শাসন পরিচালনা করেন।
আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা
-
জেলা পুলিশ সুপারের অধীনে প্রতিটি উপজেলায় থানা কার্যক্রম।
-
সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনীর তৎপরতা (হিলি সীমান্ত)।
-
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ফায়ার সার্ভিস ইউনিট সক্রিয়।
অর্থনীতি ও শিল্প
-
কৃষি প্রধান: ধান, লিচু, গম, ভুট্টা, সবজি উৎপাদন।
-
বিখ্যাত পণ্য: দিনাজপুরের সুগন্ধি চাল (কাজলশাইল), লিচু।
-
ক্ষুদ্র শিল্প: ইটভাটা, শীতবস্ত্র, চিনি শিল্প (সেতাবগঞ্জ চিনি কল)।
-
বানিজ্য: হিলি স্থলবন্দর দেশের অন্যতম বৃহৎ ব্যবসায়িক কেন্দ্র।
শিক্ষা ও প্রতিষ্ঠান
-
সরকারি দিনাজপুর কলেজ, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (HSTU)।
-
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।
-
উচ্চ মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর বিস্তৃতি।
-
শিক্ষার হার (২০২৪): প্রায় ৭৫%
স্বাস্থ্য ব্যবস্থা
-
দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: প্রধান স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র।
-
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি ক্লিনিকের বিস্তৃতি।
-
আধুনিক বেসরকারি হাসপাতাল এবং ক্লিনিক বিদ্যমান।
যোগাযোগ ও অবকাঠামো
-
সড়ক: জাতীয় মহাসড়ক (N5) ও আন্তঃউপজেলা সংযোগ।
-
রেল: দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে আন্তঃনগর ও স্থানীয় ট্রেন।
-
স্থলবন্দর: হিলি স্থলবন্দর (বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার)।
-
নদীপথ: সীমিত ব্যবহৃত।
পর্যটন ও দর্শনীয় স্থান
-
ঐতিহাসিক: কান্তজিউ মন্দির, রামসাগর জাতীয় উদ্যান।
-
প্রাকৃতিক: চিরিরবন্দর ও ফুলবাড়ী এলাকায় মনোরম প্রকৃতি।
-
সাংস্কৃতিক: জমিদার বাড়ি, পুরাতন স্থাপত্য।
সংস্কৃতি ও জীবনধারা
-
খাদ্য: লিচু, সুগন্ধি চালের ভাত, পিঠা-পুলি।
-
ঐতিহ্য: গ্রামীণ মেলা, হিন্দু ও মুসলিম উভয় ধর্মীয় উৎসব।
-
হস্তশিল্প ও কুটির শিল্প প্রচলিত।
সারাংশ
দিনাজপুর জেলা বাংলাদেশের খাদ্যশস্য উৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এর কৃষি, পর্যটন, শিক্ষা এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। ঐতিহাসিক ঐতিহ্য এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মেলবন্ধনে দিনাজপুর উত্তরাঞ্চলের একটি উজ্জ্বল রত্ন।
নিউজ ও আর্টিকেল
নিচের শিরোনামগুলোতে ক্লিক করে এই অংশ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ নিবন্ধসমূহ পড়ুন:
আমাদের লক্ষ্য (ওয়েবসাইট ভিশন)
এই ওয়েবসাইটে আমরা তুলে ধরছি বাংলাদেশের প্রতিটি:
-
বিভাগ, জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রাম সংক্রান্ত তথ্য
-
ইতিহাস, জনসংখ্যা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি, কৃষি, পরিবেশ
-
পর্যটন স্থান, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, স্থানীয় উৎসব ও খাদ্যসংস্কৃতি
-
তথ্যনির্ভর, নির্ভরযোগ্য ও আপডেটেড একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় তথ্যভাণ্ডার
যোগাযোগ করুন
আপনার এলাকার তথ্য আপডেট বা সংশোধনের জন্য আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
আপনার অংশগ্রহণই আমাদের এই তথ্যভান্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলবে।
ধন্যবাদ!
আপনি এখন বাংলাদেশের প্রতিটি প্রান্ত জানার যাত্রায় আছেন – আমাদের সাথেই থাকুন!